রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৭

সুখী পরিবার

খাদিজা বসে আছে প্রফুল্ল মনে,একটু পূর্বে মাহবুবের সাথে কথা হয়েছে।
সে মাহবুবের সংসারে এসেছে বছর খানেক হবে কিন্তু এরই মধ্যে একজন অপর জনকে মনে প্রাণে ভালবাসে,সামান্য সময় কথা না হলে বা আসতে দেরী হলে তার পেরেশানীর অন্ত থাকে না।এমনিভাবে খাদিজা কোন কারণে কল না ধরলেও তার স্বামীর পেরেশানীর অন্ত থাকে না।একজন অপর জনের অনুপস্থিতি হাড়ে হাড়ে টের পায়।প্রিয়জনকে কাছে না পেলে বুঝা যায় বুকের ভিতরে কী যেন ব্যাথায় ব্যাথাতুর হয়ে যাচ্ছে,চোখ দিয়ে পানি ঝরিয়ে পড়ে,অনেক অভিমান ও রাগ হয় ,কিন্তু দেখার পর সব অভিমান রাগ উধাও হয়ে যায়,অভিমান ও রাগ সব পানি হয়ে ভালবাসায় পরিণত হয়।
মাহবুব মাঝে মাঝে খাদিজার কোন কাজের প্রশংসা করে ,তাকে খূশী করার জন্য ,তখন খাদেজার মনে হয় জীবনটা সার্থক মনে হয়,মাঝে মাঝে ভাবে মনে হয় সুন্দরভাবে কাজটি হয়নি তাই এমনটা বলছে। পরবর্তিতে সচেতনতাও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার চেষ্টা করে ।
মাহবুব সামান্য বেতনে চাকরী করে তা থেকে কিছু টাকা বাচিয়ে কোন বস্তু কিনে তাকে উপহার হিসাবে দেয়।সে এগুলি নাড়িয়ে দেখতেই থাকে তার কাছে মনে হয়পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও সর্বোৎকৃষ্ট বস্তু এনে দিয়েছেন,যতই দেখতে থাকে ততই তার বাধনে আর ও গভীরভাবে জরিয়ে পড়ে আর ভাবে আমার স্বামী আমাকে কতই না  বাসেন ভাল !
মাহবুব যখন তাকে কোন কাজ করার কথা বলেন তখন তার মনে হয় ইহা তার করাই অতীব প্রয়োজন,ইহা বাস্তবায়ন না করলে যেন তার স্বস্তিই হয় না।সে যদি কোন কাজ থেকে নিষেধ করে তখন তার মনে হয় যে ইহাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ , মাহবুবের অবস্থা এরকমই ।খাদিজা মাহবুবের কাছে কোন কিছু আব্দার করে না এ ভয়ে যে যদি তার স্বামী তার আব্দার পূর্ণ করতে না পারে ,তাহলেতো উনি নিজেকে ছোট মনে করবেন,মাহবুব ও এ বিষয়টা অনুধাবন করতে পারে তাই সে ইচ্ছা করেই অনেক সময় তার রুচি হতে পারে এরকম  নানান বস্তু কেনে আনে তার  স্ত্রীর মনোবাঞ্চা পূর্ণ করার জন্য।সে স্বামীর প্রতিটি বস্তু খূব সতর্কতার সাথে হেফাজত করে।স্বামীর কাপড়-চোপড় বা অন্য কিছু অপরিস্কার দেখলেই তা পরিস্কার করার জন্য মন ব্যকুল হয়ে যায়। সাংসারিক আর ও কত কাজ থাকে তাই তার স্বামী ইচ্ছা করেই তার জন্য কোন কাজ পেলে রাখে না , সব সময় নিজের কাজ নিজেই করে নেয়    সে স্ত্রীর এ মনোভাব বুঝতে পেরে খূব আনন্দিত ।কোন সময় কোন কাজ কারণবশতঃ করতে পারে না আবার কোন সময় ইচ্ছা করেই কিছু কাজ তার জন্য রেখে দেয় যাতে সে উৎসাহ না হারিয়ে পেলে।
কোন জায়গায় বেড়াতে গেলে বা কারো বাড়ী যেতে হলে মাহবুব শতবার ভাবে তার নিরাপত্তা নিয়ে,এমনিভাবে তার স্ত্রী ও ভাবে কোন জায়গায় গমন করলে কোন অপ্রীতিকর কোন কিছু ঘটবে কি না?এবং সসম্মানের সাথে চলা-ফেরা করা যায় কি না?
খাদিজা অসুস্থ হলে তার পেরেশানীর অন্ত থাকে না,এমনিভাবে তার স্বামী অসুস্থ থাকলে ও তার পেরেশানীর অন্ত থাকে না ।
স্বামীর কোন দোষ তার চোখে পড়লে তার স্বামী বিষয়টি আচঁ করতে পেরে শোধরে যান,এমনিভাবে তার স্বামীর কেউ বদনাম করলেও তার খূব কষ্ট অনূভব হয়,তার স্বামী স্ত্রীর মূখের মলিনতা দেখে বুঝে পেলেন কিছু একটা হয়েছে তাই কৌশলে এ বিষয়টা জেনে নিয়ে সংশোধন হয়ে যান বা এর পেছনে কোন কারণ থাকলে এর সদুত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন,তদ্রুপ তার স্ত্রীর অবস্থা ও।
যতই দিন যাচ্ছে মাহবুবের কাছে খাদেজাকে আগের চেয়ে আকর্ষণীয় ও সুন্দরী মনে হচ্ছে,এমনিভাবে খাদেজার কাছে ও তার স্বামী যেন আগের চেয়ে সুঠাম সুন্দর দেহের অধিকারী মনে হয়।
এ কথা গুলো খাদেজা কেদারায় বসে তম্বয় হয়ে ভাবতেছিলেন  যে তেমন কিছু পায়নি কিন্তু মনে হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর সব কিছু আমি পেয়ে গেছি, স্বামীর ভাল ভাবে সেবা করতে পারিনি কিন্তু স্বামীর মনে হয় আমাকে পেয়ে  তিনি সব কিছু পেয়েছেন।
কথা গুলো আমার মনের কল্পনা , একটি সূখী পরিবারের চিত্রায়ন  করার চেষ্টা করেছি মাত্র। বর্তমানে প্রায় জায়গায় সংসারে অ-শান্তির খবর পাওয়া যাচ্ছে যার একমাত্র কারণ আমি মনে করি সিনেমার চরিত্রে অধিক আবেগ আপ্লুত হওয়া ও অধিক আকর্ষণ , যেমন কোন পন্য বাজারে ব্যবসা করতে হলে নায়ক নায়িকাদের দ্বারা একটা বিজ্ঞাপন ,তারপর তা বাজারে খূব প্রচলন হয়।অনেক সময় কাপড়ের দোকানে মেয়েদের বলতে শুনি অমুক ছবির কাপড় আছে কী?  সেজে গুজে নায়িকাদের মত , হাটেও নায়িকাদের মত করে। মনে মনে নায়িকা ভাব ,সুখের বিরাট সপ্ন,বিবাহের পর প্রিয়জনের মধ্যে সপ্নের যে চিত্র ছিল তার অভাব,অন্তরে জমতে থাকে ঘৃণা,ঘৃণা বাড়তে বাড়তে এক সময় অশ্রদ্ধাতে পরিণত হয়,আর অশ্রদ্ধাতেই অমিলের আরম্ভ হয় আর তা শেষ পর্যন্ত ছাড়া-ছাড়ি পর্যন্ত গড়ায়।এমনি ভাবে ছেলেরা তাদের হবু স্ত্রীকে নিয়ে অসম্ভব কল্পনা জল্পনা করতে থাকে। বিয়ের পর যখন প্রিয়জনের মধ্যে তার আশানুযায়ী হয়না তখন আরম্ভ হয় সংসার নষ্ট করার একেকটা ধাপ। কারণ সিমেনাতে নায়ক ও নায়িকাকে অল রাউন্ডার হিসেবে দেখেছে আর বাস্তব জীবনে এর উল্টোটা পাচ্ছে  ।বাস্তব কথা হচ্ছে সর্ব গুণে গুণাণ্বিত লোক পাওয়াই কঠিন তাই যা পাওয়া যাচ্ছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা বুদ্ধমানের কাজ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন