মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

নব বর্ষ

ঈসায়ী নব বর্ষ
--------------- শামসুল আবেদীন
আর কটা দিন পর আসছে ঈসায়ী নব বর্ষ ২০১৮।৩১শে ডিসেম্বর মধ্য রাতের অপেক্ষায় অপেক্ষিত থাকবেন অনেকেই। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন যেন আমরা সর্বাবস্থায় তার আদেশ মেনে চলি। আমাদের চিন্তা চেতনা এমন হয়ে যাচ্ছে নামাজ আদায় করা ইবাদত হালাল রুজি রোজগার নয়,রোজা রাখা ইবাদত হারাম থেকে বেঁচে থাকা নয় ।
এ মনোভাব নিয়ে হিসাব নিকাশ করলে দেখা যায় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এক ঘন্টার মতো সময় ব্যয় হবে। বাকি ২৩ ঘন্টা নিজ কাজে ব্যায় হবে,অথচ উম্মতে মোহাম্মদীর হায়াত অতি অল্প।অল্প সময়ে অনেক কিছুই করতে হবে।এ ভাবে চলা উচিত যে খাবার খাব এ উদ্দেশ্যে যে খানা খেলে শরীরে শক্তি আসবে শক্তি যোগাড় হলে ইবাদত করতে পারব,ঘুমাব এ উদ্দেশ্যে যে ঘুমালে শরীরের ক্লান্তি দূর হবে আর ক্লান্তি দূর হলে একাগ্র চিত্তে ইবাদত করা যাবে,ইস্তেঞ্জা করব এ উদ্দেশ্যে যে ইস্তেঞ্জা করলে অস্থিরতা দূর হবে ও মনে প্রশান্তি লাভ করবে , অস্থিরতা দূর ও  মনে প্রশান্তি লাভ করলে নিশ্চিন্তে ইবাদত করা যাবে।মোট কথা আমাদের عادت তথা অভ্যাসকে যে গুলো আমরা প্রতিদিন করি বা মানবিকতার কারণে যে কাজ সমূহ করে থাকি নিয়্যাতের মাধ্যমে ইবাদতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে উদাহরণ স্বরূপ মৃতব্যক্তির নামাজে জানাজায় শরিক হওয়া ও দাফন কাফন সম্পন্ন করা লোকেরা মানবিকতার কারণে করে থাকে কিন্তু যদি নিয়্যাত করে নেয় তাহলেতো এই কাজটি ইবাদতে পরিণত হয়ে যায়, তাই আমাদের এভাবে চলা উচিত যেন জীবনের এক পল ও যেন ইবাদত বিহীন না হয়।
উৎসব সাধারণত একটি
জাতির ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে সম্পৃক্ত হয়।
উৎসবের উপলক্ষ্যগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে
তাতে রয়েছে উৎসব পালনকারী জাতির ধমনীতে
প্রবাহিত ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় অনুভূতি, ধর্মীয়
সংস্কার ও ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া।
উদাহরণস্বরূপ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড় দিন
তাদের বিশ্বাসমতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন।
মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হতো ২৫শে
মার্চ এবং তা পালনের উপলক্ষ্য ছিল, ঐ দিন
খ্রিস্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট এ
মর্মে ওসি বাণী প্রেরিত হয় যে, মেরী ঈশ্বরের
পুত্র জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে
গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক
ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারি নববর্ষ
উদযাপন করা আরম্ভ করে। ঐতিহ্যগতভাবে এ
দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত।
ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড
টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন
‘সাবাত’ হিসেবে পালিত হয়।
এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসবের মাঝেই
ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর
এজন্যই ইসলামের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ
করেছেন। ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের
সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই।কারণ
রাসুলুল্লাহ (দঃ) এরশাদ করেন ﻣﻦ ﺗﺸﺒﻪ ﺑﻘﻮﻡ ﻓﻬﻮ ﻣﻨﻬﻢ
যে বিজাতিয় কালচার রীতি নীতি অনু্সরণ সে
তাদের দলভুক্ত ,এছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন: “ ﻟﻜﻞ ﻗﻮﻡ ﻋﻴﺪ ﻭ ﻫﺬﺍ ﻋﻴﺪﻧﺎ প্রত্যেক জাতির নিজস্ব
উৎসব রয়েছে, আর
এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী: ৯৫২; মুসলিম: ৮৯২]
বিখ্যাত ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)
এ সম্পর্কে বলেন: “উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান,
সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-
অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে
আল্লাহপাক কুরআনে বলেন: ‘ ﻟﻜﻞ ﺟﻌﻠﻨﺎ ﻣﻨﻜﻢ ﺷﺮﻋﺔ ﻭ
ﻣﻨﻬﺎﺟﺎতোমাদের
প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান
এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ (সূরা আল-
মায়িদাহ, ৫:৪৮)অপর এক আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন
ﻟﻜﻞ ﺍﻣﺔ ﺟﻌﻠﻨﺎ ﻣﻨﺴﻜﺎ ﻫﻢ ﻧﺎﻛﺴﻮﻩ
প্রতিটি জাতির জন্য আমি
অনুষ্ঠান [সময় ও স্থান] নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা
তাদেরকে পালন করতে হয়।’ (সূরা আল-হাজ্জ্ব,
২২:৬৭)
অতএব, অমুসলিমদের উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া
এবং তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেই।
তাদের উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে একমত পোষণ করার
অর্থ কুফরের সাথে একমত পোষণ করা। আর এসবের
একাংশের সাথে একমত পোষণ করার অর্থ কুফরের
শাখা বিশেষের সাথে একমত হওয়া। উৎসব-
অনুষ্ঠানাদি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
উৎসব দ্বারা ধর্মগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত
করা যায়। নিঃসন্দেহে তাদের সাথে এসব
অনুষ্ঠান পালনে যোগ দেয়া একজন মুসলমানক
কুফরের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর
বাহ্যিকভাবে এগুলোতে অংশ নেয়া নিঃসন্দেহে
পাপ।
উৎসব অনুষ্ঠান যে প্রতিটি জাতির স্বকীয়
বৈশিষ্ট্য, এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার ইঙ্গিত
করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘প্রত্যেক জাতির
নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটা আমাদের ঈদ।’
এছাড়া আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণিত:
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন [মদীনায়] আসলেন, তখন
তাদের দুটো উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেন, ‘এ
দুটো দিনের তাৎপর্য কি?’ তারা বলল,
‘জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটো দিনে উৎসব
করতাম।’ রাসূল্লাল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ
দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের উত্তম
কিছু দিন দিয়েছেন: কুরবানীর ঈদ ও রোযার ঈদ ”।
(সূনান আবু দাউদ) এ হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে
যে, ইসলাম আগমনের পর ইসলাম বহির্ভূত সকল
উৎসবকে বাতিল করে দেয়া হয়েছে এবং
নতুনভাবে উৎসবের জন্য দুটো দিন নির্ধারণ করা
হয়েছে। সেই সাথে অমুসলিমদের অনুসরণে
যাবতীয় উৎসব পালনের পথকে বন্ধ করা হয়েছে।
নববর্ষ উদযাপন সম্পর্কে ইসলামের চেতনা : ইমাম
আবু হানিফা (রহ.)-এর দাদা তার পিতাকে
পারস্যের নওরোযের দিন (নববর্ষের দিন) আলী
(রা.)-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু
হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল
নওরোয উপলক্ষ্যে। ফলে) আলী (রা.) বললেন,
“নওরোযুনা কুল্লা ইয়াওম” মুমিনের প্রতিটি দিনই
তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানিফা, সয়মারী)
অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-
নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখেরাতের পাথেয়
সংগ্রহ করবে।
গত বছর যদি ধর্মীয় কাজ ইবাদত বন্দেগীতে কাটাতে
পারি তাহলে আরেকটি নতুন বর্ষ পাওয়ার কারণে
যে নব বর্ষ দান করলো তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা
,আর যদি তা ভাল কাজে ব্যয় না করতে পারি কষ্ট ও
ব্যথা অনুভব হওয়া উচিৎ।যেমন কবি বলেন ﻳﺴﺮ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻣﺎ
ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻠﻴﺎﻟﻲ ﻭﻟﻜﻦ ﺫﻫﺎﺑﻬﻦ ﻟﻪ ﺫﻫﺎﺏ
  কালের আবর্তে মানুষ খুশি হয়,কিন্তু সময়
অতিক্রান্ত হওয়ায় মানুষেরও চলে যাওয়ার সময় হয়ে
যায়
তাই নববর্ষ উপলক্ষ্যে পরস্পরে
উপহার বা প্রেজেন্টশন আদান-প্রদান এবং
শুভেচ্ছা বিনিময় নাজায়িয। নতুন বছর নতুন কল্যাণ
বয়ে আনে, দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার
গ্লানি এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ
সমর্থিত নয়, বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের
শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পূজারী
মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার
অবশিষ্টাংশ। এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান
ইসলামে নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি
মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখ-, হয় সে এই মুহূর্তকে
আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয়
সঞ্চয় করবে, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত
হয়ে শাস্তি যোগ্য হয়ে উঠবে। তাই একজন
মুসলমানের কাছে বছরের প্রথম দিনের কোন
বিশেষ কোন গুরুত্ব ও তাৎপর্য নেই। এর সাথে
জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন
দূরতম সম্পর্কও নেই। আর সেক্ষেত্রে
নববর্ষের কি-ই বা তাৎপর্য থাকতে পারে
ইসলামে?
কেউ যদি এ ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের
প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে,
তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে
অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে,
আল্লাহ এই উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ
বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর
শিরক এমন অপরাধ যে, শিরক এমন অপরাধ যে,তা সব
সময় আমলকে নষ্ট করতে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন