শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বনী ইসরাইলের তিন ব্যক্তির ঘটনা ।

বোখারী শরীফে বর্ণিত আছে, হযরত
রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরায়ীল
গোত্রে তিনজন লোক ছিল বিভিন্ন রোগে
আক্রান্ত। তন্মধ্যে একজন ছিল কুষ্ঠ
রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয় জন মাথায় টাক
পড়া, তৃতীয় জন অন্ধ। আল্লাহ্ তা‘য়ালা এই
তিনজনকে পরীক্ষা করতে ইচ্ছা করলেন।
তিনি একজন ফেরেশতা পাঠালেন।
ফেরেশতা প্রথমে কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত
লোকটির নিকট গিয়া বললেন, তুমি কী
চাও? লোকটি উত্তর করল: আমি আল্লাহ্র
কাছে এই চাই যে, আমার এই কুৎসিত
ব্যাধি নিরাময় হউক, আমার দেহের চর্ম
নূতন রূপ ধারণ করে সুন্দর হউক-যেন আমি
লোক সমাজে যেতে পারি, লোকে
আমাকে ঘৃণা না করে। আমি যেন এই
বালা হতে মুক্তি পাই। ফেরেশতা তার
শরীরে হাত বুলায়া দো‘আ করিলেন।
মুহূর্তের মধ্যে তার রোগ নিরাময় হয়ে
গেল। সর্বশরীর নূতন রূপ ধারণ করল। তারপর
আল্লাহর ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞাসা
করলেন, তুমি কী পেতে চাও? লোকটি
বলিল, আমি উট পেলে সন্তুষ্ট হই।
ফেরেশতা তাকে একটি গর্ভবতী উট্নী
এনে দিলেন এবং আল্লাহর দরবারে
বরকতের জন্য দো‘আ করলেন।
অত:পর ফেরেশতা টাকপড়া লোকটির
নিকট গিয়া বললেন, তুমি কোন জিনিস
পছন্দ কর? লোকটি বলল, আমার মাথার
ব্যাধি নিরাময় হউক, যে কারণে লোক
আমাকে ঘৃণা করে। আল্লাহর ফেরেশতা
তার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন। সঙ্গে
সঙ্গে মাথা ভাল হয়ে গেল। নূতন চুল
গজালো নূতন রূপ ধারণ করল। এখন
ফেরেশতা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন
প্রকারের মাল তুমি পাইতে চাও? সে
বলিল, আল্লাহ্ যদি আমাকে একটি গরু দান
করেন, তবে আমি খুব সন্তুষ্ট হই। ফেরেশতা
একটি গর্ভবতী গাভী এনে দিলেন এবং
বরকতের জন্য দোয়া করলেন।
অনন্তর ফেরেশতা অন্ধ লোকটির নিকট
গমন করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি
কী চাও? লোকটি বলল: আল্লাহ্ তা‘আলা
আমার চোখ দুটির দৃষ্টিশক্তি যেন
ফিরাইয়া দেন , যেন আমি আল্লাহর
দুনিয়া দেখতে পাই। ইহা আমার আরজু।
আল্লাহ্ তা‘আলার ফেরেশতা তাহার
চোখের উপর হাত বুলাইয়া দিলেন। সঙ্গে
সঙ্গে তাহার চোখ ভাল হয়ে গেল। সে
দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। অত:পর ফেরেশতা
জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা বল তো, কোন
বস্তু তুমি পছন্দ কর? অন্ধ বলল, আল্লাহ্ যদি
আমাকে একটি বকরী দান করেন, আমি খুব
খুশী হব। ফেরেশতা তৎক্ষণাৎ একটি
গাভীন বকরী আনিয়া তাহাকে দিলেন
এবং বরকতের দোআ করে চলে গেলেন।
অল্প দিনের মধ্যেই এই তিন জনের উট, গরু
এবং বকরীতে মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেল।
তারা প্রত্যেকে এক একজন বিরাট ধনী।
অনতিকাল পরে সেই ফেরেশতা প্রথম
ছুরতে পুনরায় সেই উটওয়ালার (কুষ্ঠ
রোগীর) নিকট এসে বললেন, আমি
বিদেশে (ছফরে) আসিয়া বড়ই অভাবগ্রস্থ
হইয়া পড়িয়াছি। আমার বাহক জন্তুটিও
মারা গিয়েছে। আমার পথ-খরচও শেষ হয়ে
গিয়েছে। আপনি যদি মেহেরবানী করে
কিছু সাহায্য না করেন, তবে আমার
কষ্টের সীমা থাকবে না। এক আল্লাহ্
ছাড়া আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। যে আল্লাহ্
আপনাকে সুন্দর স্বাস্থ্য ও সুশ্রী চেহারা
দান করেছেন তার নামে আমি আপনার
নিকট একটি উট প্রার্থনা করতেছি।
আমাকে একটি উট দান করুন। আমি উহাতে
আরোহণ করে কোন প্রকারে বাড়ি যেতে
পারি। লোকটি বলল, হতভাগা কোথাকার!
এখান হতে দূর হও, আমার নিজেরই কত
প্রয়োজন রয়েছে? তোমাকে দিবার মত
কিছুই নাই। ফেরেশতা বললেন, আমি
তোমাকে চিনি বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি
কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত ছিলে না? লোকে কি এই
রোগের কারণে তোমাকে তুচ্ছ ও ঘৃণা করত
না? তুমি কি গরীব ও নিঃস্ব ছিলে না?
তৎপর আল্লাহ্ পাক কি তোমাকে এই ধন-
সম্পদ দান করেন নাই? লোকটি বলল, বাঃ
বাঃ! কি মজার কথা বলছো? আমরা বাপ-
দাদার কাল হতেই বড় লোক। এই সম্পত্তি
পুরুষানুক্রমে আমরা ভোগদখল করে
আসতেছি। ফেরেশতা বললেন, যদি তুমি
মিথ্যাবাদী হও, তবে আল্লাহ্ তাআলা
তোমাকে সেইরূপ করে দিন যেরূপ তুমি
পূর্বে ছিলে। কিছুকালের মধ্যে লোকটি
সর্বস্বান্ত হইয়া পূর্বাবস্থা প্রাপ্ত হল।
অনন্তর ফেরেশতা দ্বিতীয় ব্যক্তি
অর্থাৎ, টাকপড়া লোকটির নিকট গমন
করলেন। লোকটির এমন সুন্দর ও সুঠাম
চেহারা! মাথায় কুচকুচে কাল চুল, যেন
তাহার কোন রোগই ছিল না। ফেরেশতা
তার নিকট একটি গাভী চাইলেন। কিন্তু
সেও উটওয়ালার ন্যায়ই “না“ সূচক শব্দে
জবাব দিল। ফেরেশতাও তাকে বদদোয়া
দিয়া বললেন, যদি তুমি মিথ্যুক হও, তবে
আল্লাহ্ তায়ালা যেন তোমার সেই
পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দেন। ফেরেশতার
দোয়া ব্যর্থ হবার নয়। তার মাথার টাক
পড়া শুরু হইল, সমস্ত ধন-সম্পদ ধ্বংশ হল।
তারপর ফেরেশতা পূর্বাকৃতিতে সেই অন্ধ
ব্যক্তির নিকট গমন করে বললেন, বাবা
আমি মুসাফির! বড়ই বিপদগ্রস্ত হয়ে
পড়েছি। আমার টাকা-পয়সা কিছুই নাই।
আপনি সহানূভূতি ও সাহায্য না করলে
আমার কোন উপায় দেখিতেছি না। যে
আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে বিরাট
সম্পত্তির মালিক করেছেন, তার নামে
আমাকে একটি বকরী দান করুন-যেন কোন
প্রকার অভাব পূরণ করে বাড়ি যেতে
পারি। লোকটি বলল, নিশ্বয়ই। আমি অন্ধ,
দরিদ্র ও নিঃস্ব ছিলাম। আমি আমার
অতীতের কথা মোটেই ভুলি নাই। আল্লাহ্
তায়ালা শুধু নিজ রহমতে আমার
দৃষ্টিশক্তি ফিরাইয়া দিয়েছেন। এই সব
ধন-সম্পদ যা কিছু দেখতেছেন সবই আল্লাহ্
তায়ালার, আমার কিছুই নয়। তিনিই অনুগ্রহ
করে আমাকে দান করেছেন। আপনার যে
কয়টির প্রয়োজন আপনার ইচ্ছামত আপনি
নিয়ে যান। যদি ইচ্ছা হয় আমার পরিবার
পরিজন ও সন্তান-সন্তুতির জন্য কিছু
রাখিয়াতেও পারেন। আল্লাহর কছম,
আপনি সবগুলি লইয়া গেলেও আমি
বিন্দুমাত্র অস্তুষ্ট হইব না। কারণ, এসব
আল্লাহর দান।
ফেরেশতা বললেন, এসব তোমার থাকুক।
আমার কিছুর প্রয়োজন নাই, তোমাদের
তিন জনের পরীক্ষা করার উদ্দেশ্য ছিল;
তা হয়ে গিয়েছে, তারা দুইজন পরীক্ষায়
ফেল করেছে। তাদের প্রতি আল্লাহ্
তায়ালা অসন্তুষ্ট ও নারায হয়েছেন। তুমি
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। আল্লাহ্ তোমার
প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
উপদেশ : হে মানুষ! চিন্তা কর! প্রথমোক্ত
দুইজন আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করে
নাই বলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ই তাদের
বিনষ্ট হয়েছে। তাদের অবস্থা কতই না
শোচনীয় হয়েছে! কারণ, আল্লাহ্ তাদের
উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তৃতীয় ব্যীক্ত
আল্লাহর শোকর করিয়াছে বলিয়া দুনিয়া
ও আখেরাত সবই বহাল রয়েছে, ধন-সম্পদ
কিছুই নষ্ট হয় নাই।
আল্লাহ্ তায়ালা ‘দিয়া ধন বুঝে মন,
কেড়ে নিতে কতক্ষণ।‘ সাধারণত: মানুষ বড়
হলে অতীতের কথা ভুলে যায়। এ ধরণের
লোককে প্রকৃত মানুষ বলা যায় না। প্রকৃত
মানুষ তারা-যারা অতীতের দুঃখ-কষ্টের
কথা স্মরণ করে আল্লাহর শোকর গোযারী
করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন