বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মুহাররম ও আশুরা

---------------------শামসুল আবেদীন
গতকাল 21/10/2017 ঈসায়ী বাংলার
আকাশে চাদ দেখা গিয়েছে।আরবী নব
বর্ষ ১৪৩৯হিজরী।
আরবী বর্ষের প্রথম মাস মুহাররম।
এর আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ বা
সম্মানিত। তখনকার সময়ের আরবরা কলহ
বিবাদ,যুদ্ধ বিগ্ৰহ ও রক্তপাত এ মাসে
নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ইসলাম আগমনের পর
নিষিদ্ধ অর্থ
রহিত করে দেয় জিহাদ করা আর নিষিদ্ধ
থাকেনি। অবশ্য দ্বিতীয় অর্থ এখন ও
বলবৎ আছে। তাই এ মাসে এবাদতের
প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হওয়া উচিত।
কুরআন মাজিদে এ মাসকে আরও তিন
মাসের সাথে উল্লেখ করে বলেন আর এর
মধ্যে চারটি মাস সম্মানী(যথা
যিলকদ,যিলহজ,মুহাররাম,রজব)বলার
অপেক্ষা রাখে না এরমধ্যে মুহাররাম
অন্যতম।
আল্লামা জাসসাস রহ. বয়ানুল কুরআনে
উল্লেখ করেন যে এই চার মাসের
বৈশিষ্ট হল ,যারা এই চার মাসে
বিশেষভাবে ইবাদত করবে আল্লাহ
তাআলা বাকি আট মাসে ইবাদত করার
তাওফিক দান করবেন ।অনুরুপ ভাবে যে এ
মাস সমূহে পাপ থেকে নিজেকে
বাচিয়ে রাখবে বাকি মাস সমূহে পাপ
কার্য থেকে বাচা সহজ হবে।
এ মাসে ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত
হয়েছে।
যেমন এ মাসের দশম তারিখে আশুরার
দিনে হজরত আদম আ. এর তওবা কবুল হয়।
এই দিনে হজরত নূহ আলাহিস সালাম এর
নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পায়।এই
দিনে হজরত ইউনুস আলাহিস সালাম
মাছের পেট থেকে বের হন ও তার
জাতীর তওবা কবুল হয়। এই দিনে হজরত
ইউসুফ আলাহিস সালাম কে কূপ থেকে
বের করা হয়।
মূসা আলাহিস সালাম এর অনুসারী বনী
ইস্রাইল এই দিনে ফেরাউন থেকে মুক্তি
পায় এবং ফেরাউন তার সভাসদ ও বিশাল
সেনা বাহিনী সহ সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়।
এই দিনে হজরত সুলাইমান আলাহিস
সালামকে বাদশাহী প্রদান করা হয়। এই
দিনে হজরত হজরত ঈসা আলাহিস সালাম
জম্ম গ্রহণ করেন ও এই তারিখে আবার
আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়।
সর্বশেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লামের দৌহিত্র হুসাইন
রাযিয়াল্লাহু আনহু শাহাদতের ঘটনা এ
মাসেই সংঘটিত হয়।
এসব ঘটনা সম্পর্কে যদিও আপত্তি আছে
তদুপরি এ কথা সত্য যে অনেক সহিহ
হাদিসে এর বর্ণনা রয়েছে।
এ মাসে করণীয় কিছু আমল,
১.এ মাসে সাধ্যানুযায়ী বেশী বেশী
রোজা রাখা।
২.বেশী বেশী তওবা ও ইস্তেগফার করা
৩.পরিবার পরিজনের প্রয়োজনে অন্যান্য
দিনের তুলনায় সামর্থানুযায়ী অধিক ব্যয়
করা।
৪.আশুরার দিন রোজা রাখা এবং ৯/১০
যে কোন একদিন আশুরার সাথে
মিলানো।
আশুরার ফযিলত সম্পর্কে অনেক হাদীস
রয়েছে
১.আয়েশা রা. থেকে বর্ণীত রমজানের
রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
আশুরার রোজা রাখতেন। রমজানের
রোজা ফরজ হওয়ার পর হুজুর সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম বললেন যার ইচ্ছা
আশুরার রোজা রাখবে ।
ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻗﺘﺎﺩﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﻴﺎﻡ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ ﺍﺣﺘﺴﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﺃﻥ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻗﻠﺒﻪ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺑﻌﺪﻩ ﻭ ﺻﻴﺎﻡ ﻳﻮﻡ
ﻋﺎﺷﻮﺭﺍﺀ ﺍﺣﺘﺴﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻔﺮ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻗﻠﺒﻪ
২-রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লাম এরশাদ করেন যে আমি
আশাবাদি আশুরার রোজার অসিলায়
আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের
(ছগিরা)গোনাহ মাফ করে দিবেন
(মুসলিম)
৩-হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
কখনো আশুরার রোজা ছাড়তেন না
(নাসায়ী)
৪-হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
রমজান ও আশুরার দিনে যেভাবে রোজা
রাখতে দেখা গেছে ,সে রকম অন্য সময়
দেখা যায়নি(বুখারী)
৫-রমজানের পর যদি রোজা রাখতে চাও
তাহলে মুহাররাম মাসে রোজা রাখো ( ﻣﺎ
ﺛﺒﺖ ﺑﺎﻟﺴﻨﺔ )
৬-আশুরার দিনে যে ব্যক্তি পরিবার
পরিজনের জন্য মুক্ত হাতে ব্যয় করবে
আল্লাহ তাআলা তার সারা বছরের
রোজগারে বরকত দিবেন।( ﺭﻭﺍﻩ ﺭﺯﻳﻦ ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ )
তবে একটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা
প্রয়োজন যে হজরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু
আনহুএর শাহাদৎ বরণের কারণে আশুরার
দিনের ফযিলত ও রোজার আদেশ
আসেনি। বরং হজরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু
আনহুর কারবালার ঘটনা ঘটার পূর্বে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লাম আশুরার ফযিলত ও রোজার
ফযিলত বর্ণনা দিয়েছেন এবং রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের
ইন্তেকালের প্রায় পঞ্চাশ বছর পর তিনি
শহীদ হন ,তাই হজরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু
আনহু শাহাদতের কারণে আশুরায় ফযিলত
এসেছে এ ধরণের কোন প্রমাণ ইসলামে
নেই।হ্যা এতটুকু বলা যাবে যে হজরত
হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের
জন্য আল্লাহ তাআলা এই বরকতময়
দিনকে পসন্দ করেছেন ,যে কারণে তার
শাহাদতের ফযিলত আর ও বৃদ্ধি পেয়েছে

এ মাসে বর্জনীয় কাজ
.তাযিয়া
কাউকে সান্তনা দেওয়া,আর পরিভাষায়
তাযিয়া বলা হয়
আশুরার সময় মাযারের মত কবর নির্মাণ
করা । ইহা অনেক ফাসেকী ও শিরিকের
ফসল ।কার ও বিশ্বাস যে হজরত হুসাইন
রাযিয়াল্লাহু আনহু স্বয়ং এতে সমাসীন
আছেন।এ বিশ্বাসের বর্শবর্তী হয়ে
অনেকে নযর নিয়াজ দিয়ে থাকে ।
গায়রুল্লাহর নামে এসব হওয়ার কারণে এ
ধরণের নযর নিয়াজ শেরেকের
অন্তর্ভূক্ত,এ ধরণের দ্রব্যাদি খাওয়া ও
হারাম।তাযিয়ার সামনে হাত জোর করে
দাড়ানো ,তার দিকে পিঠ না
ফেরানো,তাতে বিভিন্ন ধরণের প্রতিক
ব্যনার টানানো , তাযিয়াকে যিয়ারত
বলা এছাড়া আর ও যত গর্হিত কাজ
আছে এক প্রকার শিরিকের অন্তর্ভূক্ত ।
.ঢাক ঢোল ও বাজনা বাজানো
আশুরার আগে ও আশুরার দিন সমূহে ঢাক
ঢোল আর বাদ্য যন্ত্রের আওয়াজে
পরিবথশ কলুষিত হয়ে ওঠে।কাজটি
একদিকে ইসলাম বিরোধী অপর দিকে
তেমনি বিভেকের পরিপন্থি ।একটি
শোক মিছিল বা একটি শোক দিবসকে
কেন্দ্র করে ঢোল ও তবলার এই আওয়াজ
আর জারী ও কাওয়ালীর সূর লহরী কেমন
শোক দিবস পালন হয় তা আমাদের
বোধগম্য নয়।
.আহাজারী করা
কিছু লোক এ দিন হায় হাসান,হায় হুসাইন
বলে আহাজারী করতে থাকে,বুক
চাপড়াতে থাকে ।এধরণের কাজ থেকে
কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হজরত
আবু সাইদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণীত আছে যে রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম
আহাজারকারী এবং শ্রবণকারীর উপর
লানত করেছেন।
.শোকের পোষাক পরা
আশুরা উপলক্ষে বিশেষ রঙ্গের বা
শোকের পোষাক পরিধান করা ও নিষিদ্ধ
কাজ।একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম একটি জানাযায়
গিয়ে দেখেন লোক জন বিশেষ ধরণের
পোষাক পরে শোক পালন করছে।রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম অত্যন্ত
অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন তোমরা কি
জাহেলী কাজ শুরু করেছ ?না জাহেলী
প্রথার অনুসরণ করছো?
আমার মনে চাচ্ছিল তোমাদর জন্য এমন
বদ দোয়া করি যে তোমাদের চেহারা
যেন বিকৃত হয়ে যায় ।এ কথা বলার পর
সবাই পোষাক খোলে তাওবা করল(ইবনে
মাজাহ)
এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নানা ধরণের
কুপ্রথা প্রচলন থাকতে পারে ,ঈমান আমল
হেফাজতের জন্য এ সব থেকে নিজে
বাচা ও অপরকে বাচানো প্রয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন